গুগুল এডসেন্স ( Google AdSense) বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগুল (Google) এর একটি বিজ্ঞাপন প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে উপার্জনের জন্য একটি ওয়েব সাইট থাকতে হবে। অ্যাডসেন্স প্ল্যাটফর্মটি কীভাবে কাজ করে তা বোঝার মাধ্যমে এটি ফ্রি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও গুগুল এডসেন্স ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
গুগুল এডসেন্স যদিও বহুদিন পূর্ব থেকেই সমগ্র বিশ্বে একটি নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উপার্জনের পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃত, কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টি অনেকের কাছেই নুতন। প্রথমদিকে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের ব্লগিং জগতে একটা হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। টাকা উপার্জনের জন্য অনেকেই নিজস্ব ওয়েবসাইট কিনে অথবা ফ্রি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এডসেন্স ব্যবহার করেছে।
সুচিপত্র
গুগোল এ্যাডসেন্স কি, এ্যাডসেন্স কিভাবে কাজ করে?
এ্যাডসেন্স হলো বিখ্যাত টেক জায়ান্ট গুগলের একটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন। গুগলের এই সেবাটি আর একটি নামে পরিচিত, আর তা হলো ”গুগল এ্যাডসেন্স”। গুগল অ্যাডসেন্সের সাহায্যে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে, প্রায় যে কেউ দ্রুত কোনও ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন শুরু করতে পারেন। আবেদনের মাধ্যমে অ্যাপ্রভাল নিয়ে এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে প্রায় সকল ওয়েবসাইটের এ্যাডমিন বা মালিকেরা তাদের সাইটে গুগোলের এ্যাড দিতে পারেন। যেহেতু আপনি আপনার সাইটে গুগোলের দেওয়া এ্যাড প্রোমোট করছেন তাই গুগোল আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিবে। কিন্তু এতে গুগোলের কি লাভ, তাই না?
আসলে গুগোল এ্যাডসেন্স এর মতোই আর একটি গুগোলের প্রোগ্রাম আছে। এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে যেভোবে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন, ঠিক তেমনি আপনিই আবার গুগোলকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে আপনার যে কোন পন্যের জন্য অন্যের সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। এই জন্য গুগোল এর আর একটি সেবা আছে। এটি হলো গুগল এডওয়ার্ড যা বর্তমানে গুগল এডস (Google Ads) নামে পরিচিত।
ওয়েবমাষ্টার, ডিজিটাল মার্কেটার, বা এ জাতীয় আরো অন্যান্য পেশার ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাইটের বা তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য গুগোলের এই সেবা ব্যবহার করে থাকে। আজকাল অনেক নতুন ও অচেনা ছোট-খাটো কোম্পানীগুলোও কিন্তু তাদের পণ্যের দ্রুত প্রচার ও প্রসারের জন্য গুগোল এ্যাডস ব্যবহার করে।
গুগোল এ্যাডস দ্বারা যারা তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তাদের এজন্য গুগোলকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়। আর গুগোল সেই অর্থ বিতরণ করে দেয় তার এ্যাড পাবলিশার বা বিজ্ঞাপন প্রকাশকদের মাঝে। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে গুগোল এ্যাডসেন্স এর ব্যবহারের মাধ্যমে গুগোলের দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখান তাহলে গুগোল আপনাকে আপনার সাইটে প্রচারিত বিজ্ঞাপন এ প্রতিটি এ্যাড ভিউ, ভিজিটরেদের ক্লিক, ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অর্থ প্রদান করবে।
এজন্য আপনাকে তেমন কোন কষ্টই করতে হবে না। গুগোল এ্যাডসেন্স আপনাকে একটি কয়েক লাইনের মাত্র জাভা স্ক্রীপ্ট এর একটি কোড দেবে এবং সেই কোডটি আপনাকে গুগোলের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী আপনার ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিলেই হবে। আপনাকে আর অন্য কিছুই করতে হবে না। গুগোল আপনার সাইটের সকল লেখা, তথ্য, সাইটের টাইটেল এবং আপনার সাইটে আসা ভিজিটরদের সম্পর্কে কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারে। আর এভাবেই গুগোল আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন দিবে।
কিভাবে গুগল এ্যাডসেন্স থেকে এ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়?
বর্তমানে এ্যাডসেন্স এ্যাকাউন্ট পাওয়া অবশ্য তেমন সহজ বিষয় নয়। তারপরও গুগোল এর নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চললে কিন্তু গুগোল ঠিকই আপনাকে এ্যাডসেন্স এ্যাকাউন্ট না দিয়ে কোথায় যাবে বলেন তো? কারণ, গুগোল তো ব্যবসা করার জন্যই বসে আছে। তাহলে তারা কেন দেবে না এ্যাডসেন্স এ্যাকাউন্ট!
যাই হোক এই লেখায় আমরা শুধু গুগল এ্যাডসেন্স নিয়ে নিয়ে আলোচনা করব, তাই আমরা পরবর্তিতে আলাদা একটি লেখায় আপনাদেরকে দেখবা কিভাবে একটি সম্পূর্ন গুগল এ্যাডসেন্স এ্যাকাউন্ট খুলতে হয়, খুব সহজে।
কিভাবে গুগোল এ্যাডসেন্স এর টাকা পাওয়া যায়?
গুগোল এ্যাডসেন্স থেকে যখন আপনার $১০০ আয় হবে তখন আপনি গুগোল থেকে আপনার ঠিকানায় চেক পাবেন ঐ টাকা তোলার জন্য, ওথবা ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনার লোকাল ব্যাংক একাউন্টে সহজেই টাকা আনতে পারেন। এজন্য অবশ্য আপনাকে আপনার ঠিকানা ভেরিফাই সহ ছোট খাট ঝামেলা পোহাতে হবে। যাই হোক, ঠিকানা ভেরিফাই করা নিয়ে অন্য একটি লেখায় আলাদা ভাবে আলোচনা করা যাবে।
কিভাবে ব্লগিং করে গুগুল এডসেন্স এর মাধ্যমে অর্থ আয় করা যায়?
গুগুল এডসেন্স এর মূল প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না বুঝার কারনে অনেকের গুগুল এডসেন্স একাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যারা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে তারা ঠিকই উপার্জন করছে।
মূল বিষয় হচ্ছে, গুগুল এডসেন্স এর মাধ্যমে যে কোন ধরনের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে উপার্জন সম্ভব। শর্ত হচ্ছে, সাইটকে জনপ্রিয় করতে হবে। সাইটে যথেষ্ট পরিমাণে ভিজিটর ঢুকতে হবে, ভাল বিষয়বস্তু (Contents) থাকতে হবে। ভিজিটর একবার সাইটে প্রবেশ করে পুনরায় প্রবেশ করার আগ্রহ থাকে এ ধরনের বিষয়বস্তু প্রতিনিয়ত আপডেট রাখতে হবে। সাইটে ভিজিটর প্রবেশ করানো এবং তাদেরকে ধরে রাখতে পারলে ভিজিটরদের একটি অংশ স্বাভাবিকভাবেই গুগুল এডসেন্সএর বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে।
মনে রাখতে হবে, যত বেশি ভিজিটর আপনার সাইটে থাকবে তত আপনার উপার্জনের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। আমি হিসাব করে দেখেছি, প্রতিদিন গড়ে ১০০০ ভিজিটর সাইটে প্রবেশ করলে গড়ে ১০% ভিজিটর গুগুল প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে। এতে গড়ে প্রতিদিন আনুমানিক ১০ ডলার এরও বেশি উপার্জন হবে। অর্থাৎ মাসে ৩০০ ডলার বা ২০০০০ টাকা উপার্জন করা সম্ভব শুধুমাত্র একটি মানসন্মত ওয়েব সাইটের মাধ্যমে।
একটি সাইট হতে এ ধরনের উপার্জন শুরু হয়ে গেলে ভিন্ন বিষয়ের উপর আরো সাইট আপনি তৈরি করতে পারবেন। অনলাইন উপার্জনের এক বিশাল দ্বার উন্মোচিত হবে আপনার জন্য। প্রয়োজন শুধু পরিশ্রম করার মানসিকতা। ভাবতে পারেন, ক্লিক করলেই যেহেতু ডলার তাহলে চিন্তা কি, সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে শুধু ক্লিক আর ক্লিক………!
গুগুল কি এতই বোকা! বিজ্ঞাপনদাতারা কি এতই বোকা! ক্লিক করলেই টাকা দিবে! না, জাল ক্লিক করুন (Fake Click) করলে গুগুল তার একাউন্ট বন্ধ করে দিবে। আসল (Original) ক্লিক করলেই শুধু ডলার জমবে।
তাহলে আসল ক্লিক কোনটি, যার মাধ্যমে ডলার পাওয়া যাবে? সে কথাই আসছি, যেহেতু সাইটের বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে গুগুল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে, সেহেতু ভিজিটর যদি সাইটের বিষয়বস্তু দেখার পাশাপাশি গুগল অ্যাড এ ক্লিক করে উক্ত বিজ্ঞাপনদাতার সাইটে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করে (এক্ষেত্রে ভিজিটর কিন্তু জাল ক্লিক করেনি, বড়ং তার নিজস্ব আগ্রহে উক্ত বিজ্ঞাপন দাতার সাইটে প্রবেশ করেছে) তবেই হবে আসল ক্লিক। এ ধরনের আসল বা স্বাভাবিক ক্লিক করলেই আপনার উপার্জন হবে।
গুগুল তার এডসেন্স প্রোগ্রামের জন্য এমন টেকনোলজি ব্যবহার করেছে যে কেও জাল ক্লিক করলে তা ধরে ফেলতে সক্ষম। অতএব, এ ধরনের অসাধু চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, গুগুল এডসেন্স একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা। এর পুঁজি হচ্ছে, আপনার ব্লগিং পরিকল্পনা ও সঠিকভাবে তার ব্যবহার। নগদ মূলধন বলতে শুধুমাত্র একটি পিসি আর ডোমেইন/হোস্টিং এর জন্য মাত্র ২/৩ হাজার টাকা। সঠিকভাবে ব্লগিং করতে পারলে, পর্যাপ্ত ভিজিটর সাইটে প্রবেশ করাতে পারলে মাসে হাজার ডলার উপার্জন করা সম্ভব – এটা কল্পনা নয়, বাস্তব।
পরিশ্রম করে একটা ভালমানের ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারলে আর ভিজিটর বাড়ানোর সব কৌশল প্রয়োগ করতে পারলে আপনাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন আর আপনার একাউন্টে ডলার জমতে থাকবে। সত্যি অভাবনীয়!
গুগুল এডসেন্স ব্যবহার করে উপার্জনের গাইডলাইন
যারা গুগুল এডসেন্স ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদী উপার্জন করতে চান তাদের জন্য নিচে কতিপয় গাইডলাইন প্রদত্ত হল।
১. যে ধরনের ব্লগিং সাইট করতে চান, তা ভেবে চিন্তে নির্বাচন করুন। অর্থাৎ যেসব সাইটে ভিজিটর বেশি প্রবেশ করে সে ধরনের সাইট তৈরি করুন।
২. সাধারণত শিক্ষামূলক (কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয়সহ অন্যান্য শিক্ষা), সাধারণ জ্ঞান, খেলাধুলা, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, ফিটনেস টিপস্, অন্যান্য টিউটোরিয়াল, টিপস্ এবং ট্রিক্স, ইত্যাদি বিষয়ের সাইটে ভিজিটর বেশি হয়ে থাকে। এ ধরনের ভালমানের সাইটকে ফলো করে আপনিও অনুরুপ ব্লগিং সাইট তৈরি করতে পারেন।
৩. প্রথমেই টাকা উপার্জনের চিন্তা মাথায় না এনে যথেষ্ট সময় নিয়ে সাইটকে সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করুন।
৪. কখনোই কোন সাইটের বিষয়বস্তু কপি করে আপনার সাইটে পোস্ট প্রচার করবেন না। অবশ্য ভাল কোন ব্লগিং সাইটকে অনুকরণ করে নুতন আর্টিকেল, টিউটোরিয়াল, টিপস্, ইত্যাদি পোস্ট করতে পারেন।
৫. সাইট পরিপূর্ণভাবে তৈরি হলে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য মনোযোগী হোন। এক্ষেত্রে এসইও (SEO) এর প্রাথমিক বিষয়গুলো প্রয়োগ করুন। ( ব্যাকলিংক তৈরি, ফোরামে পোস্ট, বুকমার্কিং ইত্যাদি)
শেষকথা
আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকলে গুগল এ্যাডসেন্স দ্বারা আয় করুন আর স্বাবলম্বী হউন। আর ওয়েবসাইট না থাকলে খুব শীঘ্রই নিজে নিজেই তৈরী করে ফেলুন। কিভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় তা নিয়ে আমাদের সাটের শীঘ্রই তথ্য প্রকাশ করা হবে, আশাকরি সেগুলো আপনাদের এ বিষয়ে সাহায্য করবে। এছাড়াও আর কোন সমস্যা হলে গুগোল মামা তো আছেই।
আপাতত আজকে তো গুগোল এ্যাডসেন্স এবং গুগোল এ্যাডওয়ার্ডস্ সম্মন্ধে কিছুটা হলেও জানলেন। এর পরে এ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত লিখবো ধীরে ধীরে।
ততদিন পর্যন্ত সাথেই থাকুন আর লেখাটা কেমন হয়েছে সেটা জানাতে কিন্তু ভুলবেন না? নাকি?