সকলেই ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করেন কোন না কোন উদ্দেশ্য পূরনের জন্য। আর একটি সাইটের মাধ্যমে এ সকল উদ্দেশ্য পূরন করতে প্রতিটি সাইটের জন্য প্রয়োজন গ্রাহক বা ভিজিটর। ভিজিটর হল একটি সাইটের প্রান সরূপ। এখ কষ্ট করে মার্কেটিং করে ভিজিটর আনার পর যদি সে ভিজিটররা আপনার উদ্দেশ্য পূরন করতে কোন অ্যাকশন গ্রহন না করে তাহলে আপনার ডাবল পরিশ্রম বিথা ছাড়া আর কিছু নয়।
আর এজন্যই মার্কেটিং এর পাশাপাশি একটি ওয়েব সাইট বা ব্লগ তৈরি করে সফল হতে আরও বেশ কিছু বিষয়ে লক্ষ রেখে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়। এগুলোর মধ্যে সাইট ডিজাইন এবং ডেভলপমেন্ট ও পেজ লোডিং স্পিড অন্যতম। আজ এই পোষ্টে আমি আপনার সাথে আলোচনা করব একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগের পেজ লোডিং স্পিড এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন সে বিষয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…
সুচিপত্র
আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের পেজ লোডিং স্পিড এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন ?
দ্রুত পেজ লোড হয় এমন ওয়েবসাইট বা ব্লগ একজন ওয়েবমাস্টার থেকে শুরু করে প্রতিটি ব্যবহারকারী পছন্দ করে থাকে। একজন ব্যবহারকারী যখন খুব সহজে একটি পেজ থেকে আরেকটি পেজে বিভিন্ন তথ্যের জন্য ভিজিট করতে থাকে, তখন ওয়েবসাইটের লোড টাইম যদি বেশি হয় তাহলে সেই ওয়েবসাইট বাদ দিয়ে সে অন্য কোন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়ে চিন্তা করে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটি ওয়েব পেজ লোড হতে ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় লাগলে গড়ে ৫৭% ভিজিটর সেই পেজটিতে ভিজিট করা থেকে বিরত থাকেন এবং ব্রাউজার ট্যাব কেটে দিয়ে সে সাইটটি ত্যাগ করে করেন।
একটি কম গতির ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজ, ওয়েবে ভিজিটরদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এবং এতে ভিজিটরেরা ৫০ শতাংশ মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। ৭৮ শতাংশ ভিজিটর একটি ওয়েবসাইট লোড হতে বেশি দেরি হলে মানসিক চাপ এবং রাগ অনুভব করতে শুরু করেন এবং ৪৪ শতাংশ ভিজিটর অনলাইন ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে স্লো ওয়েবসাইটে উদ্বিগ্নতা অনুভব করতে শুরু করেন। মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার কারীদের ক্ষেত্রে স্লো ওয়েবসাইটে শতকরা ৪% রাগের এমন পর্যায়ে পৌঁছে যান, যেন তারা তাদের মোবাইল ফোন ছুঁড়ে ফেলে দেন।
একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন আমি বা আপনি কোন স্লো ওয়েব সাইট কি পছন্দ করি? সম্ভবত উত্তর না, তাহলে আপনার সাইটের পাঠকরাও তো আপনার মতই অপছন্দ করবে যদি আপনার সাইটটিও স্লো হয় তাই নয় কি?
তাহলে আপনার সাইট কতটা দ্রুত লোড হওয়া উচিত?
একজন ভিজিটর এক পেজ থেকে আরেক পেজে ভিজিট করতে তেমনটাই সময় ব্যয় করতে ইচ্ছা পোষণ করে, যেমনটা তারা বইয়ের এক পাতা থেকে অন্য পাতায় যেতে ব্যয় করে। তাহলে একজন সফল ওয়েবমাষ্টার হিসেবে আমাদের ব্লগ বা ওয়েবসাইটগুলোকে এমন ভাবে তৈরি করতে হবে, যেন কোন ভিজিটর লোডিং স্পীড কম হওয়ার কারণে ওয়েবসাইট ত্যাগ না করে। আর যদি আপনি এটি না করতে পারেন সেক্ষেত্রে ভিজিটর দের সাথে আপনার সাইটের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সৃষ্টি হবে না এবং ব্যাবসায়িক বা ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে আপনি বিক্রয় হারাবেন।
আপনার সাইট কতটা দ্রুত তা কিভাবে বুঝবেন?
একটি ওয়েবা সাইট বা ব্লগ কতটা দ্রুত লোড হচ্ছে তা বুঝবেন পরিমাপ করার জন্য অনলাইনে বেশ কিছু টুল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সব চাইতে ভাল ও জনপ্রিয় কয়েকটির লিস্ট আমি নিচে উল্লেক্ষ করছি। এগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার সাইটের লোড টাইম সম্পর্কে একটি পরিস্কার ধারনা পেয়ে জাবেন আশা করি।
- Google PageSpeed Insights
- GTmetrix
- Pingdom Website Speed Test
- WebPageTest
- Uptrends
- Yellow Lab Tools
- DotCom-Tool – Website Speed Test
এছাড়াও গুগলে ক্রোম ওয়েব ব্রাউজার এর সাথে Page load time ও Google Chrome DevTool এক্সটেনশন ব্যবহার করেও পেজ লোড স্পিড টেস্ট করতে পারবেন।
পেজ লোডিং স্পিড কোন কোন বিষয়ের সাথে জড়িত?
সাইটের লোড টাইম কমাতে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে কোন কোন বিষয় গুলো এর সাথে জরিত। এটা না জানলে আপনি সাইটের পেজ লোড টাইম ইম্প্রুভ করার জন্য কোন সিদ্ধান্ত নেয়া বা কাজ করতে পারবেন না। এজন্যই একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইরটের পেজ লোডিং স্পিড যেসকল বিষয়ের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি বিষয়ের নাম নিচে উল্লেক্ষ করা হল:-
- হোস্টিং
- সিডিএন
- সাইট ডেভলপমেন্ট
- অপটিমাইজেশন
সাইট হোস্টিং
কোন সাইটে পেজ লোডিস্পিড যে সমস্ত বিষয় গুলোর সাথে জড়িত তার মধ্যেই ওয়েবসাইট হোস্টিং অন্যতম। কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইটের হোস্টিং কে উক্ত সাইটের জন্য ফাউন্ডেশন বা মূল পিলার হিসেবে গন্য করা হয়। এর কারন হলো, যেহেতু একটি সাইট ইউজারের ব্রাউজার থেকে এক্সেস করার রিকোয়েস্ট পাওয়ার পর কত তাড়াতাড়ি সেই সাইট লোড হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে এই হোস্টিং বা হোস্টিং সার্ভার এর উপর।
এজন্যই কোন সাইটের হোস্টিং কেনার আগে আপনার হোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা জরুরি। এবং ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে যে সকল বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত তা জেনে ও বুঝে সঠিক হোস্টিং কোম্পানি থেকে উপযুক্ত প্লান বা প্যাকেজ ক্রয় করা উচিত।
সিডিএন (CDN)
সিডিএন (CDN) বা কন্টেন্ট ডেলিভরি নেটওয়ার্ক (Content delivery network) কোন সাইটের স্ট্যাটিক রিসোর্স গুলো উক্ত সাইটের বিভিন্ন ভিজিটরদের কাছা কাছি লোকেশনে অবস্থিত কোন ডাটা সেন্টার থেকে সার্ভ করে থাকে। এর ফলে সাইটের লোডিং টাইম অনেক দ্রুত হয়ে থাকে। একটি ভাল মানের হোস্টিং এর সাথে সিডিএন সেবা ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যেগুলোে এই সাইটে প্রকাশিত সিডএন সম্পর্কিত আর্টিকেলে উল্লেক্ষ করা হয়েছে।
সাইট ডেভলপমেন্ট
একটি ওয়েবসাইট কিভাবে ডিজাইন এবং ডেভলপ করা হয়েছে তার উপর একটি ওয়েবসাইট গতি অনেকটা নির্ভরশীল। সাধারণত ভালো ডিজাইনার বা ডেভলপার দ্বারা কোন সাইট তৈরির কাজ করা হলে তা মান সম্পূর্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও কিছু বিষয় লক্ষ রেখে সাইট ডিজাইন ও কাস্টমাইজ করা হলে ভাল লোডিং স্পিড পাওয়া যায়। যেমন: ওয়ার্ডপ্রেস সাইট হলে কম প্লাগইন্ ব্যবহার করা, কম কাস্টম সিএসএস (CSS) ব্যবহার করা, এবং ব্লগস্পট ব্লগ হলে সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript), ও জেকুয়েরী ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করা।
অপটিমাইজেশন
একটি ওয়েবসাইট উত্তম উপায়ে ডিজাইন এবং ডেভলপ কারা ছারাও এর কাছা কাছি আর কিছু উপায়ে সাইটের গতি বাড়ানো বা অপটিমাইজ করা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইটের এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, ইত্যাদি কম্প্রেস বা মিনিফাই করা, সাইটে ব্যবহৃত ইমেজ কম্প্রেস করা বা আপলোডের পূর্বেই কম্প্রেস করে নেয়া, ইমেজ লেজিলোডিং অপশন চাল করা, ইত্যাদি।
উপরক্ত বিষয় গুলো ছাড়ও আরও বেশ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলা এই সাইটে প্রকাশিত ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের পোজ লোড গতি বাড়ানোর উপায় বিষয়ক আর্টিকেল বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
শেষকথা
আশা করি একটি ওয়েবসাইট পারফরম্যান্স বা লোডিং স্পিড সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে অপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। এখন আপনার যদি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট থাকে সেক্ষেত্রে উপরে দেওয়া ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের গতি বাড়োনোর উপায় বিষয়ক পোষ্টটি পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করব।
পরবর্তীতে আমরা এই লেখা টি আপডেট করে আরো উন্নততর করতে থাকব, তাই এই পোষ্ট সম্পর্কে আপনাদের মতামত, পরামর্শ এবং এই পোস্টে উল্লেখ্য করা হয়নি এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে মন্তব্য সেকশনের মাধ্যমে জানাবেন আশাকরি।
সবশেষে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।